৫৪৩ দিন পর স্কুল খুলেছে

অনলাইন ডেস্ক •

ফাইল ছবি

করোনা মহামারির কারণে ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর আজ রোববার সকালে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে বসার জন্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক তাপমাত্রা মাপা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা মহিউদ্দিন আলমগীর জানিয়েছেন, ‘এখানে ক্লাস শুরু হয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৭টায়। ক্লাস ফাইভ ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ক্লাসে বসেছে।’

‘এর আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে শুরু করে। গেটে থার্মোমিটার দিয়ে তাদের শরীরের তাপমাত্রা মাপতে দেখা গেছে। স্কুলে ঢুকে তারা হাত ধুয়ে ক্লাসরুমে বসেছে।’

‘স্কুলে ঢোকার সময় গেটে কোনো জটলা ছিল না। শিক্ষার্থীদের সবাইকে মাস্ক পরতে দেখা গেছে।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসরীন সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত উপস্থিতি সন্তোষজনক।’

শিক্ষার্থীদের আবার স্কুলে আসা উপলক্ষে স্কুলের পক্ষ থেকে পেন্সিল, শার্পনার, ইরেজার ও কলম উপহার দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি খুবই সুশৃঙ্খল। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে ফ্লোরে মার্ক দেওয়া আছে। থার্মোমিটার দিয়ে শিক্ষাথীদের শরীরের তামপাত্রা মাপা হচ্ছে। হাত ধোয়ার পাশাপাশি জুতা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করায় শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হতে পারে— এমন আশঙ্কার জায়গা থেকে দীর্ঘ বিরতির পরে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থী মহামারির এ সময় শ্রেণিকক্ষের বাইরে ছিল।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল বলেছেন, বিদ্যালয় খোলার পর সংক্রমণ বাড়লে আবারও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

করোনা সংক্রমণ কমে আসায় গত ৫ সেপ্টেম্বর সরকার পর্যায়ক্রমে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস চালু ঘোষণা দেয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুল ও কলেজ খোলার পর উচ্চ মাধ্যমিক ২০২১ ও ২০২২ সালের মাধ্যমিক এবং এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসিই) শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে। প্রথম থেকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন করে সশরীরে ক্লাস করবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে স্বাস্থ্য নির্দেশনার সাধারণ পরিচালন পদ্ধতি (এসওপি) পাঠিয়েছে। স্কুলে ক্লাস শুরু হওয়ার পর নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।

এই নির্দেশনায় প্রধান শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মীদের সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকা এবং শ্রেণীকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া, কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা কর্মীর করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এ ছাড়া, শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে থাকতে পারবে এবং তাদেরকে অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করা হবে না।

নির্দেশনায় শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে, প্রতিটি ক্লাসের শুরুতে একটি অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য। কোনো ছাত্র যেন ক্লাসের মাঝখানে বের হয়ে না যায়, সেটা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

এসওপি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে— তারা যেন যে কোনো ধরনের অসুস্থতার কথা শিগগির অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানায়। কোনো জরুরি কারণ ছাড়া শ্রেণীকক্ষের বাইরে না যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এসওপি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, পরিবারের কোনো সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যেন তারা শিগগির এই তথ্যটি প্রধান শিক্ষককে জানান। একইসঙ্গে, শিশুদের বাইরের খাবার খেতে নিরুৎসাহিত করার ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে এসওপিতে।

৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় স্কুল খোলার সরকারি পরিকল্পনা ঘোষণা করার সময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, সরকার স্কুল খোলার পর সার্বিক করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা সেটার ওপর ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গত বছরের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল হয়ে গিয়েছিল এবং প্রায় দেড় লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।